স্বদেশ ডেস্ক:
অনেকদিন আগে একটি মাছ মারা গিয়ে পলিতে চাপা পড়ে ছিল। পরে জীবাশ্ম হয়ে গিয়েছিল। ৩১৯ মিলিয়ন (প্রায় ৩২ কোটি) বছর পর সম্প্রতি সেই মাছটির মাথার খুলি স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা পেলেন চমকপ্রদ সব তথ্য। এটি একটি ভালোভাবে সংরক্ষিত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মস্তিষ্কের প্রাচীনতম উদাহরণ
হিসেবে সামনে এসেছে।
গত বুধবার নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল ছাত্র রদ্রিগো ফিগুয়েরো। ছোট মাছটি কোকোসেফালাস ওয়াইল্ডি, এটি এক ধরনের রশ্মি-পাখনাযুক্ত মাছ। রশ্মিযুক্ত মাছের জীবন্ত উদাহরণের মধ্যে রয়েছে সোর্ডফিশ এবং ট্রাউট। এটি একটি বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠী, যা প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতি নিয়ে গঠিত।
ছোট ধূসর রঙের মাছটির গায়ে গাঢ় ডোরাকাটা দাগ রয়েছে এবং তার ছিল ছোট্ট গোলাপি মস্তিষ্ক। বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, কোকোসেফালাস ওয়াইল্ডি ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি বছর আগে বেঁচে থাকার সময় দেখতে কেমন ছিল। জীবাশ্মটি মূলত এক শতাব্দী আগে ইংল্যান্ডের একটি কয়লা খনিতে পাওয়া গিয়েছিল।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিবৃতিতে জীবাশ্মবিদ স্যাম জাইলস বলেছেন, ত্রিমাত্রিকভাবে সংরক্ষিত মেরুদণ্ডী মস্তিষ্কের এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার রশ্মি-পাখাযুক্ত মাছের নিউরাল অ্যানাটমি সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য দেয়। এটি আমাদের বর্তমানে জীবন্ত মাছেদের বিবর্তনের আরও জটিল একটি ধরন সম্পর্কে ধারণা দেয়। এর ফলে আরও ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে যে, কীভাবে এবং কখন বর্তমান দিনের হাড়যুক্ত মাছগুলো বিবর্তিত হয়েছিল।
গবেষকরা একটি নন-ইনভেসিভ সিটি স্ক্যান ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং এই প্রযুক্তি জীবাশ্মের ক্ষতি না করে মাথার খুলির ভেতরে দেখতে দেয়। তারা প্রায় এক ইঞ্চি (২.৫ সেন্টিমিটার) লম্বা একটি মস্তিষ্ক এবং ক্র্যানিয়াল স্নায়ু খুঁজে পেয়েছেন।
গবেষকরা আধুনিক দিনের প্রাণীদের সঙ্গে প্রাচীন মস্তিষ্কের গঠন তুলনা করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে সব রশ্মি-পাখাযুক্ত মাছের মস্তিষ্ক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দিকে ভাঁজ হয়। কোকোসেফালাসের মস্তিষ্ক ভেতরের দিকে ভাঁজ করা। এই জ্ঞান বিজ্ঞানীদের রে-ফিনড মাছের মস্তিষ্কের বিবর্তনের সময়রেখা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
জীবন্ত মাছের সঙ্গে নতুন জীবাশ্মটির তুলনা করে দেখা গেছে যে, কোকোসেফালাসের মস্তিষ্কের সঙ্গে স্টার্জন এবং প্যাডেলফিশের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি মিল। এগুলোকে প্রায়ই ‘আদিম’ মাছ বলা হয়, কারণ তারা ৩০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে অন্য সব জীবন্ত রশ্মি-পাখাযুক্ত মাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।